টেকনাফে গবাদিপশু ও মুরগীর খামার গুলো ইয়াবার গুদাম!

সিএনআই ◑

করোনা সংকটেও থেমে নেই মাদক পাচার। পাচারকারী চক্র এখন বেচে নিয়েছে টেকনাফের পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকাকে।

সরকার সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ঘোষনা করেছে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। এ ফাকেঁ মাদক পাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়ে পশ্চিম উপকূলের বিভিন্ন পয়েন্টে রাতের আধাঁরে ইযাবার চালান ঢুকাচ্ছে। শুধু তাই নয়।

পাচারকারী চক্র উপকূলের কাছাকাছি তৈরী করে রেখেছে বড় বড় গবাদিপশু ও মুরগীর খামার। এসব খামারই হচ্ছে ইয়াবা মওজুদ, লেদদেন ও সরবরাহের ঠিকানা এমনটি তথ্য নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি টেকনাফ মহেষখালীয়া পাড়া মুল সৈকত এলাকায় ইয়াবার একটি বড় চালান লুটপাত করেছে একদল স্থানীয় সন্ত্রাসী। তা ছাড়া একটি ঘাট দিয়ে ইয়াবার চালান ঢুকবে এমন সংবাদে পুলিশি অভিযান শুরু হলে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এতে একজন পাচারকারী মারা যায়। উদ্ধার করা হয় ১০ হাজার পিস ইয়াবা। এ ঘটনায় আহত হয় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও। ’

সরেজমিন গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, টেকনাফের হারিয়াখালী, খুরের মুখ, মহেষখালীয়া পাড়া, লম্বরী, নোয়াখালী, হলবনিয়া , শামলাপুর ইত্যাদি পয়েন্ট দিয়ে গভীর রাতে এবং ভোরে ফিসিং ট্রলার হতে ইয়াবার চালান ঢুকতে দেখা যায়। গত বৃহস্পতিবার ভোরে মহেশখালীয়া পাড়া ঘাটে ইয়াবার বড় চালান ঢুকে। এ ট্রলারে ১০/১৫ বস্তা ইয়াবা ছিলো বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা ধারনা করছেন।

এ সময় খবর পায় স্থানীয়রা। স্থানীয় পশ্চিম গোদার বিলের মৃত কালা মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ কাসিম ও মোহাম্মদ হোসেন মাদুর ছেলে জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে ১৫/২০ ভাড়াটিয়া শ্রমিক গিয়ে ইয়াবার চালানটি লুটপাত করে। এরা দ্রুত এলাকার নিজস্ব গবাধিপশু ও মোরগীর খামার এবং বাড়ীর নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে রাখে। এ ঘটনা টেকনাফের আইনশৃংখলা বাহিনীর নজরে আসে। পুলিশ এসব উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করে। এ ফাকেঁ পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনায় মারা যায় মহেশখালীপাড়া এলাকার ফজল আহাম্মদের পুত্র আবুল কাশেম(৩২)। সে ভোরে লুণ্ঠিত ট্রলারের মাঝি বলেও জানান স্থানীয়রা।

এদিকে আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা ও বন্দুক যুদ্ধে একজন মারা যাওয়ার পর হতে ওই এলাকার পাচারকারীদের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ নিজেদের ইয়াবা আস্তানা , খামার বাড়ি ভেঙ্গে ফেলছে বা পুড়িয়ে দিয়ে ভালো মানুষ সাজার চেষ্টাও চালাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে এভাবে পুড়িঁয়ে বা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাবির পাড়ার কালা মিয়া, ফারুক, খোনকার পাড়ার মুজিব ও মহেষখালীয়া পাড়ার কাশেমের খামার ঘর। এ ছাড়া মৌলভী পাড়ার একরাম মার্কেটের দোকান পাঠ ছেড়ে দিয়েছে বেশ কজন ভাড়াটিয়া।

বন্দুক যুদ্ধে নিহত ইয়াবা কারবারী কাশেম : অস্ত্র,গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার টেকনাফ বীচ সংলগ্ন মেরিন ড্রাইভ সড়ক সাগর উপকুলীয় এলাকায় পুলিশের সাথে গোলাগুলিতে আবুল কাশেম (৩২) নামের এক মাদক কারবারী নিহত হয়েছে। সে টেকনাফ সদর ইউনিয়ন মহেশখালীপাড়া এলাকার ফজল আহাম্মদের ছেলে। এ সময় এবং তিন পুলিশ আহত। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১০ হাজার পিস ইয়াবা,দেশীয় তৈরী ১টি এলজি,৫ রাউন্ড গুলি । এ ঘটনায় পুলিশের এএসআই কাজী সাইফুদ্দিন, কনস্টেবল মো: মামুন ও কামরুল হাসান আহত হয়েছে বলে দাবী
করেছে পুলিশ।

জানা যায়, ৩ জুলাই (শুক্রবার) গভীর রাত ১টার দিকে মাদক পাচারের গোপন সংবাদ পেয়ে পুলিশের একটি দল টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন মহেশখালীয়াপাড়া ফিশিংঘাট এলাকায় অভিযানে গেলে মাদক পাচারে জড়িত অপরাধীরা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষন শুরু করে আত্মরক্ষার্থে পুলিশ সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের গোলাগুলি থেমে যাওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক যুবককে উদ্ধার করে টেকনাফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরন করে।

সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক গুলিবিদ্ধ ব্যাক্তিকে মৃত ঘোষনা করে। এদিকে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল তল­াশী করে ১০ হাজার ইয়াবা,দেশীয় তৈরী ১টি এলজি,৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ জানান,পুলিশের সাথে গোলাগুলিতে নিহত হওয়া মাদক ব্যবসায়ী আবুল কাশেমসহ মাদক কারবারে জড়িত বেশ কয়েকজন অপরাধী মহেশখালীয়া পাড়া ফিশিংঘাট এলাকা ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে আইন-শৃংখলা বাহিনীর চোঁখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা পাচার চালিয়ে আসছিল।

তিনি আরো বলেন উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত পালিয়ে যাওয়া মাদক কারবারীদের নির্মুল করার জন্য পুলিশের মাদক বিরোধী চলমান এই যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। প্রসংগত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের (০৩ জুলাই ) এ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৪৮ জন নিহত হয়েছে।